কলিন হুভারের অসংখ্য ভক্ত পাঠক রয়েছে। আবেগে পরিপূর্ণ লেখায় দক্ষ হওয়ার কারণে তার বইগুলি জনপ্রিয়। এ পর্যন্ত তার লেখা বই বিক্রি হয়েছে ২০ মিলিয়নেরও বেশি কপি। আর নিজের পথেই তিনি এসব অর্জন করেছেন।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত লেখক ড. সিউস এর চেয়ে হুভারের বই অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে। এমনকি জেমস প্যাটারসন এবং জন গ্রিশাম এর মতো বড় দুজন লেখকের বিক্রি হওয়া বইয়ের সংখ্যা যোগ করলেও তা কলিন হুভার এর সমান হবে না।

তিনিই এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘বেস্ট সেলিং’ ঔপন্যাসিক। বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় অন্যান্য খ্যাতনামা যেসব লেখকের একাধিক বই রয়েছে, তারাও হুভারের মতো এত বেশি পাঠক পায়নি।


আলেকজান্ড্রা অলটার
নিউ ইয়র্ক টাইমস, ৯ অক্টোবর, ২০২২
অনুবাদ. মাহতাবুল আলম


সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া পেপারব্যাক ফিকশন বা পেপারব্যাক সংস্করণে প্রকাশিত উপন্যাসের তালিকা বানায় যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস। তাদের তালিকায় সেরা ১০টি বইয়ের মধ্যে হুভারেরই বই ৬টি। বেস্ট সেলারের তালিকায় একজন লেখকের এতগুলি বই থাকা অবাক হওয়ার মতই ব্যাপার। শুধুমাত্র ২০২২ সালেই তার বই বিক্রি হয়েছে ৮.৬ মিলিয়ন। ‘এনপিডি বুকস্ক্যান’ এর হিসাব অনুযায়ী, এই সংখ্যা বাইবেলের চেয়েও বেশি।

নিজের সাফল্য নিয়ে হুভার নিজেও অবাক। তার মতে, বিশাল এই সফলতার ধাক্কা তিনি এখনো সামলে উঠতে পারেননি। তার জনপ্রিয়তার ফলে বই বিক্রি নিয়ে প্রকাশনা শিল্পে যে বদ্ধমূল ধারণা ছিল, সেটা একেবারেই পাল্টে গেছে।

কলিন হুভার
নিজের বইয়ের ডিসপ্লে’র সাথে লেখক

২০১২ সালের জানুয়ারিতে নিজ উদ্যোগেই তিনি প্রথম উপন্যাস স্ল্যামড (Slammed) প্রকাশ করেছিলেন। বইটা ছিল প্রাপ্তবয়স্ক তরুণদের জন্য লেখা উপন্যাস। পেশাজীবনে একজন সমাজকর্মী হিসেবে তখন তিনি ঘণ্টায় ৯ ডলার আয় করতেন। তার স্বামী ছিলেন দূরপাল্লার ট্রাক চালক। স্বামী ও তিন ছেলেকে নিয়ে একটা সিঙ্গেল-ওয়াইড ট্রেইলারে (সরানো যায় এমন বাড়ি। পার্ক হোম বা ট্রেইলার হোম নামেও পরিচিত এটি। সিঙ্গেল ওয়াইড ট্রেইলার সাধারণ ৫০০ থেকে ১৩ হাজার স্কয়ার ফিটের হয়ে থাকে) বাস করতেন হুভার।

প্রথম প্রকাশিত সেই বইয়ের রয়্যালটি হিসেবে শুরুতে ৩০ ডলার পেয়ে তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন। অন্তত পানির বিল মেটানোর জন্য এই টাকাটা যথেষ্ট ছিল।

৪২ বছর বয়সী হুভারের তখন নিজের বই প্রকাশের জন্য কোনো প্রকাশক বা এজেন্ট ছিল না। কিংবা বেস্ট সেলার হওয়ার জন্য যেসব মার্কেটিং কৌশল গ্রহণ করতে হয়, সেগুলিও  তার ছিল না। বড় অঙ্কের মার্কেটিং প্রচারণা, টক শো, পডকাস্ট, কথা বলার প্ল্যাটফর্ম, সাহিত্য পুরস্কার কিংবা সাহিত্য বোদ্ধাদের কাছ থেকে বই নিয়ে পর্যালোচনা—এসব কিছুই ছিল না তার বইয়ের।

কিন্তু ৭ মাস পর তার উপন্যাস স্ল্যামড নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার এর তালিকায় জায়গা করে নেয়। মে মাসের মধ্যেই হুভার রয়্যালিটি হিসেবে ৫০,০০০ ডলার লাভ করেন। সেই অর্থ থেকে সৎ বাবাকে টাকা দিয়ে তিনি ট্রেলারের মূল্য পরিশোধ করেন। সে বছর গ্রীষ্মের আগেই তার আরো দুটি বই বেস্ট সেলার তালিকায় স্থান পায়। অন্য বইটি ছিল স্ল্যামড এর সিক্যুয়েল, যার নাম পয়েন্ট অফ রিট্রিট (Point of Retreat)। এরপর তিনি পেশা ছেড়ে দিয়ে একজন ফুল টাইম লেখক হিসেবে লেখালেখি শুরু করেন।

নিজের প্রচেষ্টাতেই সফল হয়েছেন তিনি। আর জনপ্রিয় হয়েছেন পাঠকদের প্রচারণার মাধ্যমে। এছাড়াও তার বই নিয়ে অনলাইন পর্যালোচনা এবং তাকে নিয়ে বানানো অসংখ্য ভিডিওই তাকে খ্যাতি এনে দিয়েছে।

তার ভক্তদের বেশিরভাগই নারী, যারা নিজেদেরকে ‘কোহর্টস’ (CoHorts) বলতে ভালবাসে। এসব ভক্ত পাঠকরা তার বই পড়ার পর বিশেষ করে এর ক্লাইম্যাক্স নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। একজন ভক্ত তার টিকটক ভিডিওতে বলেছিলেন, “আমি চাই কলিন হুভার আমার মুখে একটা ঘুষি মারুক। তাতে তার বইয়ের চেয়ে অনেক আস্তে ব্যথা পাওয়া যাবে।” ভক্তদের কাছ থেকে আসা এ ধরনের প্রতিক্রিয়া তার জন্য নিত্য ঘটনা।

‘এনপিডি বুকস্ক্যান’ এর তথ্য অনুসারে, সব জনরা বা ঘরানা মিলিয়ে ২০২২ সালের ১০-টি ‘বেস্ট সেলিং’ বইয়ের মধ্যে প্রথম পাঁচটিই ছিল তার। অথচ তার বর্তমানে বেস্ট-সেলিং হওয়া বইগুলি কয়েক বছর আগে প্রকাশিত। প্রকাশনা জগতে এমন ঘটনা বিরল।

প্রকাশনা শিল্প বিশ্লেষক পিটার হিলডিক-স্মিথ এর মতে: “(বইয়ের) বাজার যেভাবে কাজ করে, তার বিপরীতে চলছেন (হুভার)।”

বেশিরভাগ বড় লেখকই জনপ্রিয় ধারাবাহিক বই লিখে বিখ্যাত হন। এর কিছু উদাহরণ হতে পারে ‘টোয়াইলাইট’ অথবা ‘হ্যারি পটার’। কিংবা বড় লেখকরা নির্দিষ্ট কোন ঘরানা বা জনরার বই লেখেন। কিন্তু হুভার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখেন। তিনি লিখেছেন প্রেমের উপন্যাস, একটা সাইকোলজিকাল থ্রিলার, একটা ভূতের গল্প এবং পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে বেদনাদায়ক উপন্যাস। এছাড়াও মাদকাসক্তি, গৃহহীনতা এবং দারিদ্র্য নিয়েও লিখেছেন তিনি।

তার বইগুলিকে যদিও বিশেষ কোনো শ্রেণিতে ফেলা যায় না, বেশিরভাগ বইয়েই যৌনতা, নাটকীয়তা ও ঘটনার হঠাৎ বাঁক বদল থাকে। এ বিষয়গুলিই ভক্তদের আসক্ত করে রাখে। হুভার বলেছিলেন, “আমাকে সব সময় এই কথাটা বলা হত যে, একটা বিষয় সামনে রেখে নিজেদেরকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হয় লেখকদের। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছিল কেন সব কিছুই নিজের ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরতে পারব না আমি? শুধুমাত্র কলিন হুভার হিসেবে নিজের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে পারব না কেন?”

‘তিনি নিজেই নিজের দায়িত্বে আছেন’

হুভারের ভক্তরা তাদের প্রিয় লেখককে তার কাজের ওপর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ নিতে দিয়েছে। যেটা প্রকাশনা শিল্পে সচরাচর দেখা যায় না।

নিজের প্রথম বই নিজে প্রকাশ করার মাধ্যমে তার লেখক জীবন শুরু হয়েছিল। এখনো তিনি মাঝেমধ্যে প্রকাশক ছাড়া নিজেই নিজের বই প্রকাশ করেন। তবে একাধিক প্রকাশকের সাথেও তিনি চুক্তি করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশকদের কাছে মুদ্রিত বইয়ের স্বত্ব বিক্রি করে দিয়েছেন এবং ই-বুক এর স্বত্ব নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন।

আগামী ৫ বছরে ৬টি বই প্রকাশের জন্য তিনি ৩টি প্রকাশনার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ‘গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল’ প্রকাশনীর সাথে কথা দিয়েছেন ৩টি থ্রিলার-এর ব্যাপারে, যারা মূলত ‘হ্যাশেট’  প্রকাশনার অংশ। ২টি প্রেমের উপন্যাস নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন অ্যাট্রিয়া প্রকাশনীর সাথে, যারা ‘সিমন অ্যান্ড শস্টার’ এর অংশ। অ্যামাজন এর অধীনে রোমান্সধর্মী বই যারা প্রকাশ করে, সেই ‘মন্টলেক’ প্রকাশনী থেকে তার আরেকটি নতুন উপন্যাস বের হওয়ার কথা রয়েছে।

এনপিডি বুকস্ক্যান এর প্রধান প্রকাশনা শিল্প বিশ্লেষক ক্রিস্টেন ম্যাকলিন-এর মতে, “প্রচলিত প্রকাশনা শিল্পের বাজার থেকেই তৈরি হয়েছে জন গ্রিশাম, লি চাইল্ড ও জেমস প্যাটারসন এর মত লেখকরা। বড় বড় প্রকাশকরাই তাদের তৈরি করেছে। এই লেখকরা একই প্রকাশকদের সাথে অনেক বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা যে সূত্রটা মেনে চলেন, তা হচ্ছে প্রকাশনা শিল্প একটা মেশিনের মত। (কিন্তু কলিন) এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তিনি নিজেই নিজের দায়িত্বে আছেন।”

কলিন হুভার
২০১৬ এর ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় এই প্রেমের উপন্যাসটি। হুভারের ভাষ্যে, “এটা আমার লেখা সবচেয়ে কঠিন বই।” ২০২৩ সালে ইন্সটাগ্রাম ভিডিওতে জানান, উপন্যাসটির ‘লিলি’ চরিত্রে অভিনয় করছেন জনপ্রিয় আমেরিকান অভিনেত্রী ব্লেইক লাইভলি। ব্লেইক সিনেমাটির এক্সিকিউটিভ প্রডিউসারও। আর রাইল চরিত্রে অভিনয় করবেন জাস্টিন ব্যালডোনি।

হুভারের অনেক বই অনেক আগে প্রকাশিত হয়েছিল। এখন সেসব বেস্ট সেলারের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে। ৬ বছর আগে প্রকাশিত বই ইট এন্ডস উইথ আস (It Ends With Us) ২০২১ সালে এসে বেস্ট-সেলার বই হিসেবে নাম করেছে এবং এখনো তালিকায় আছে। প্রচুর বিক্রি হয়েছে বইটা। এই উপন্যাসে গম্ভীর ও অ্যাবিউসিভ এক নিউরো সার্জনের প্রেমে পড়ে একজন ফুল ব্যবসায়ী নারী।

ব্রিটনি লরেনকো ২০২১ সালে ‘ইট এন্ডস উইথ আস’ এবং ‘আগলি লাভ’ পড়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়া ছবি পোস্ট করেছিলেন, টিকটকে

নিউইয়র্ক টাইমস এর পেপারব্যাক লিস্ট এর তালিকায় বেস্ট-সেলার বই হিসেবে বইটি ১ নম্বর অবস্থানে রয়েছে। বইটির প্রায় ৪ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। পাঠকদের অনুরোধে হুভার বইটির একটি সিক্যুয়েল বের করছেন, যার নাম দিয়েছেন ‘ইট স্টার্টস উইথ আস’ (It Starts with Us)। অ্যাট্রিয়া প্রকাশনী থেকে আসা নতুন এই সিক্যুয়েল প্রকাশ পেয়েছে গত বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর। আর প্রথম মুদ্রণেই বইটির ২.৫ মিলিয়ন কপি প্রকাশিত হয়েছে।

হুভার খুব দক্ষভাবে সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ৩.৯ মিলিয়ন ফলোয়ার আছে। সেখানে তিনি উদ্ভট ও নিজের সমালোচনামূলক ভিডিও ছেড়ে দর্শক শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছেন। তাছাড়া সময়ও যেন তার পক্ষেই ছিল। লেখক জীবনের শুরু থেকেই তার অনেক ভক্ত থাকলেও ঠিক মহামারীর সময়ই তার বইয়ের বিক্রি অনেক বেড়ে যায়। কারণ এ সময়ে সামাজিক মাধ্যম টিকটক-এ তার বই পাঠকদের মাঝে সাড়া জাগায়। এখন পর্যন্ত #colleenhoover হ্যাশট্যাগ এর ভিউ সংখ্যা ২.৪ বিলিয়নের চেয়েও বেশি।

কলিন হুভারের বইয়ের প্রধান প্রকাশক অ্যাট্রিয়া প্রকাশনীর প্রধান লিবি ম্যাগুয়ার হুভারের এই জনপ্রিয়তাকে ‘অপরাহ বুক ক্লাবের বিপরীত’ এক দৃশ্য বলে অভিহিত করেছেন। আমেরিকান ব্যক্তিত্ব অপরাহ উইনফ্রে কোনো বইয়ের কথা একবার বললেই সেটা ২ মিলিয়ন কপি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে, এমন নজির আছে। আর এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় শত শত মানুষ কলিন হুভারের বইয়ের কথা বলছে, সুপারিশ করছে। আর এতে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ৪ মিলিয়ন বই। লিবি বলেন, “আমরা প্রকাশক হিসেবে শুধু বসে বসে দেখছি আর ভাবছি, দেখা যাক, এরপর কোন বইটা আলোচনায় উঠে আসে!”

হুভার এর দাবি, তিনি ‘ইমপোস্টার সিনড্রোম’-এ ভুগছেন আর অনেক খারাপ অবস্থায় আছেন। আর বিষয়টা নিয়ে তিনি হতভম্ব।

তিনি বলেন, “আমি নিজেও অন্যান্যদের বই পড়ি এবং তাদেরকে আমার ঈর্ষা হয়। (সেসব বই পড়ার সময়) আমার মনে হয়, এগুলি আমার বইয়ের চেয়ে অনেক ভাল। কিন্তু আমার বই এত বেশি বিক্রি হচ্ছে কেন? এর পেছনে আসলে আমার অবদান নেই। কোন বই বেশি বিক্রি হবে, তা পাঠকরাই নিয়ন্ত্রণ করেন।”

সুনিয়ন্ত্রিত কর্মসূচি

গ্রীষ্মের এক তীব্র গরমের দিনে ডালাসে এক বাণিজ্যিক অফিসের কনফারেন্স রুমে বসে ছিলেন হুভার। তাকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। কারণ এক মেকআপ আর্টিস্ট তার সাজসজ্জা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ছিলেন। মেকআপ আর্টিস্ট যখন হাসিমুখে তাকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি কী ধরনের লুক চান, হুভার দ্বিধায় পড়ে গেলেন।

উত্তরে হুভার বললেন, যে সাজটি মেকআপ আর্টিস্ট এর কাছে ভাল মনে হয়, সেভাবেই সাজিয়ে দিতে। মোটকথা হুভার তখন অস্বস্তির মধ্যে ছিলেন।

এরপর লং বিচের ঢেউ এর মত করে হুভারের চুল কার্ল করা হলো, লাগানো হল আইল্যাশ। তারপর গুহার মতো দেখতে একটা আন্ডারগ্রাউন্ড কনভেনশন হলে ঢুকলেন হুভার। একটা ভাঁজ করা টেবিলের সামনে তিনি বসে পড়লেন। চারপাশে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকা দর্শকদের সাথে দেখা করার জন্য তখন তিনি প্রস্তুত।

এটা ছিল ‘বুক বোনানজা’ নামের একটি অনুষ্ঠান, যা তিনি প্রতিবছরই আয়োজন করেন। মূলত তার লেখা রোমান্স জনরার উপন্যাসের পাঠকদের সাথে এই দিন দেখা করেন তিনি এবং এই অনুষ্ঠান থেকে আয় করা অর্থ তিনি দান করেন।

যাই হোক, অনুষ্ঠানে আসার পর থেকে পরবর্তী ৫ ঘণ্টা একের পর এক ডায়েট পেপসি খেতে খেতে তার বুক সাইনিং অনুষ্ঠানটি শেষ করেন। একই সাথে কমপক্ষে ৫০০ ভক্তের সাথে সেলফি তুলতে হয় তাকে। এদের মধ্যে অনেকেই আবার চাকা লাগানো ক্রেট-এ করে হুভারের লেখা একগাদা বই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ চঞ্চল হয়ে চারপাশে ঘুরছেন, এবং হুভারকে চকোলেট ও ইউনিকর্ন রাবার উপহার দিচ্ছেন। কেউ আবার অভিভূত হয়ে রয়েছেন, কারো চোখে পানি।

কলিন হুভার
‘বুক বোনানজা ২০২২’ এ বইয়ে সিগনেচার করছেন হুভার

হুভারের বুক সাইনিং অনুষ্ঠান সবসময়ই ভাল হয়। অতিথিরা সুন্দরভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান শুরুর অপেক্ষা করতে থাকেন। হুভারের সহকারীরা অতিথিদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে সাহায্য করেন। এদের মধ্যে একজন ভক্তদেরকে অভিবাদন জানায় এবং তাদের প্রত্যেকের নাম স্টিকি নোটের একটা পাতায় টুকে রাখে। আরেকজন অতিথিদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে গুডিব্যাগ ধরিয়ে দেয়। তৃতীয়জন একে একে তাদের সেলফোনগুলি নেয় এবং হুভারের সাথে প্রত্যেকের হাসিমুখে ছবি তুলে দেয়।

অতিথিরা গড়ে হুভারের সাথে এক মিনিটেরও কম সময় কথা বলার সুযোগ পান। কিন্তু ‘কোহর্টস’দের কাছে হুভারের সাথে সাক্ষাৎ করা হচ্ছে ধর্মীয় তীর্থযাত্রায় যাওয়ার মত একটা ব্যাপার।

যেমন টেক্সাসের ডেন্টন এলাকার বাসিন্দা অ্যাঞ্জি ল্যপিন নামের এক ভক্ত হুভারকে দেখে বলে উঠলেন, “আমি কেঁদে ফেলব! আপনি আমার জীবনের একটা অংশ।”

ল্যপিন বলেন, তিনি হাইস্কুলে থাকতে প্রথম হুভারের বই পড়েন। কিন্তু প্রসবোত্তর হতাশা বা ‘পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন’ কাটিয়ে ওঠার জন্য কয়েক বছর আগে আবারও হুভারের বই পড়া শুরু করেছেন।

“তার লেখা আমাকে হাসতে, কাঁদতে এবং প্রেমে পড়তে শিখিয়েছে। তার বইগুলি আমাকে আবারও উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে।”

ম্যারি কেড নামে আরেকজন ভক্ত পাঠক এসেছিলেন কেপ কড থেকে। ম্যারি ভয়ে ভয়ে হুভারের সামনে ১৮টি বই সাজিয়ে রাখার পরে ভাবছিলেন এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিনা।

এদিকে দেখা যায় সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই হুভার কয়েক হাজার বই, টি শার্ট, মগ এবং পুরুষের লিঙ্গ আকৃতির কাঠের শার্কুটারি (charcuterie) বোর্ডে সাইন করে ফেলেছেন। ‘ভবিষ্যৎ কোহর্ট সদস্য’ লেখা এক শিশুর জামার ওপরও হুভারকে সাইন করতে হয়েছিল। পুরোটা সময়ে কখনো ভক্তদের প্রতি তার মনোযোগের অভাব হয়নি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হুভার সত্যিই ক্লান্ত হয়ে পড়েন আর চুপিসারে পেছনের দরজা দিয়ে অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে যান।

বেস্ট সেলারের তালিকায় যেভাবে জায়গা করে নিলেন

হুভার বেড়ে উঠেছেন স্যাল্টিলো শহরে। ছোট এই শহরটি ডালাসের ৯০ মাইল আগে অবস্থিত। সেখানে থাকতে অনেক ছোটবেলার এক ঘটনার স্মৃতি মনে করতে পারেন তিনি। হুভারের তখন ২ বছর বয়স। এক রাতে হুভার তার বাবার চিৎকার শুনে জেগে উঠলেন আর দেখলেন মায়ের দিকে টেলিভিশন ছুড়ে মারছেন তার বাবা। আঘাত পেয়ে হুভারের মা মাটিতে পড়ে যান। এর কিছুদিন পরই তার বাবা-মা’র ডিভোর্স হয়ে যায়। পরবর্তীতে হুভার জানতে পারেন, তার বাবা মদে আসক্ত ছিলেন এবং মাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। হুভারের বয়স যখন ২৫ বছর, তখন তার বাবা মারা যান।

কলিন হুভার
নিউইয়র্ক টাইমস এর তালিকায় সেরা ১০টি বইয়ের মধ্যে হুভারেরই বই ৬টি

এদিকে হুভারের বয়স যখন ৪ বছর, তার মা আবারও বিয়ে করেন। তাদের পরিবার আর্থিক সংকটের মধ্যে ছিল তখন। পারিবারিক ভাবে একটা দুধের খামার ছিল তাদের। সেই খামারে ৫০টি গরু ছিল। সেখানে হুভার ও তার বড় বোন লিন খুব ভোরে উঠে কাজ করতেন। তাছাড়া সপ্তাহের ছুটির দিনগুলিতেও খামারে কাজ করতে হত তাদের।

১৯৯৭ সালে হুভার একটি কমিউনিটি কলেজে পড়ার জন্য বৃত্তির আবেদন করেন। আবেদনের ফরম পূরণ করতে গিয়ে তিনি হিসাব করে দেখেন, সে বছর তাদের খামার থেকে মাত্র ১৩,০০০ ডলার আয় হয়েছিল।

কলেজ থেকে তিনি ‘সমাজ কর্ম’ বিষয়ের ওপর স্নাতক করেন এবং বেশ অনেক বছর ধরে সমাজসেবা সংক্রান্ত কাজ করেন। শিশুদের নিয়ে কাজ করা এক ‘চাইল্ড অ্যাডভোকেসি সেন্টার’ এবং বৃদ্ধদের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা ‘হোম হেলথ হসপিস’ (Hospice) এর মত সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা আছে হুভারের। এছাড়াও একটা রাষ্ট্রীয় সংস্থাতেও কাজ করেছেন তিনি, যারা জনগণকে পুষ্টি নিয়ে কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করত।

কলিন হুভার
হুভার ও তার স্বামী উইলিয়াম হিথ হুভার। ২০২১ সালের ৪ মে ২১তম বিবাহবার্ষিকীর দিনে হুভার তাদের বিয়ে পরবর্তী কিছু ছবি পোস্ট করেন ফেসবুকে। ছবিটি সেই অ্যালবাম থেকে সংগৃহীত। কলিন ও উইলিয়াম ২০০০ সালে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান রয়েছে।

২০১১ সালে হুভারের ছোট ছেলের বয়স যখন ৭ বছর, স্থানীয় এক নাট্যশালায় ছেলেকে অভিনয়ের জন্য নিয়ে যান তিনি। ছেলে যখন নাটকের দৃশ্য রিহার্সাল করত, সময় কাটানোর জন্য তখন হুভার মায়ের কাছ থেকে একটা ল্যাপটপ ধার করে আনেন। ছেলের রিহার্সালের সময় তিনি বসে বসে ইউটিউবে স্ল্যাম পোয়েট্রি’র ভিডিও দেখতেন। ‘স্ল্যাম পোয়েট্রি’ হল মূলত মঞ্চে কবিতা আবৃত্তির এক ধরনের প্রতিযোগিতা। এভাবে স্ল্যাম পোয়েট্রি দেখতে দেখতেই তার মাথায় উপন্যাস লেখার আইডিয়া আসে। উপন্যাসের বিষয়বস্তুও তিনি ঠিক করে ফেলেন। আইডিয়াটা ছিল এক নিঃসঙ্গ কিশোরী মেয়েকে নিয়ে, যে হঠাৎ করেই ‘স্ল্যাম পোয়েট্রি’ আবিষ্কার করে।

লেখার পরে উপন্যাসের কিছু অধ্যায় তিনি পরিবারের লোক ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করেন। পুষ্টিকেন্দ্রে হুভারের বস ছিলেন স্টেফানি কোহেন নামের একজন। হুভারের লেখা পড়ে তার এতই ভাল লাগে যে, হুভারের কিছু কাজের দায়িত্ব তিনি নিজেই নিয়ে নেন। এতে দিনের কিছুটা সময় ও লেখার সুযোগ পান হুভার। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে হুভার তার বই স্ল্যামড অনলাইনে অ্যামাজনের সেলফ-পাবলিশিং প্ল্যাটফর্মে আপলোড করেন।

হুভারের মায়ের নাম ভ্যানয় ফিটে। হুভারের বই যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, তখনকার স্মৃতি মনে করতে গিয়ে তিনি বলেন, “একদিন (হুভার) আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, ‘মা ৬ জন অপরিচিত লোক আমার বই কিনেছে।’ পরের দিন এমন লোকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০-এ।”

এভাবে আস্তে আস্তে যখন তার বই প্রচুর বিক্রি হওয়া শুরু করল, প্রকাশকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ল। হুভার তখন জেন ডিস্টেল নামের একজন লিটেরারি এজেন্টের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলেন এবং অ্যাট্রিয়া প্রকাশনীর কাছে তার প্রথম ২টি উপন্যাসের স্বত্ব বিক্রি করলেন। অ্যাট্রিয়া প্রকাশনী তার তৃতীয় বইটির স্বত্ব কিনতে চাইলেও হুভার তার তৃতীয় বই নিজেই প্রকাশ করার স্বাধীনতাটুকু চেয়েছিলেন। সেই ভাবনা অনুসারে পরে নিজেই প্রকাশ করেন। এই বই’ই নিউইয়র্ক টাইমস-এর বেস্ট সেলার এর তালিকার প্রথম স্থান দখল করে নেয়। অ্যাট্রিয়া অবশ্য পরে গিয়ে এই বইটির স্বত্বও কিনে নেয়।

একসময় স্বামী হিথ সন্তানদের দেখাশোনা শুরু করেন। এতে হুভার তার লেখার জন্য প্রয়োজনীয় সময় হাতে পান। এদিকে হুভার তার বইয়ের ব্যবসা পরিচালনার জন্য তার প্রাক্তন বস কোহেনকে নিয়োগ দেন। অবশ্য হুভার তাকে এখনো বস বলেই ডাকেন। হুভারের মতে, “তিনিই (কোহেন) আমাদের জীবনের সব সিদ্ধান্ত নেন। আমি তার পরামর্শ ছাড়া একটা পয়সাও খরচ করি না।”

স্ল্যামড্ লেখার পর তিনি ২০টিরও বেশি বই লিখেছেন। তরুণদের রোমান্স থেকে যৌনতা বা থ্রিলার—বেশ অনেক কিছুই তার লেখার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে পরবর্তীতে। তবে ২০২০ সালে মহামারীর সময়ই মূলত হুভারের বই বিক্রি বেড়ে যায়। সে বছর বসন্তের সময় হুভার তার ৫টি ই-বুক অনলাইনে ফ্রিতে ছেড়ে দেন। পাঠকরা বিনা মূল্যে পাওয়া এই ৫ বই গোগ্রাসে পড়ে ফেলার পর তার আগের সব বই কিনতে শুরু করে। হুভারের মনে হয়েছিল এমন তুমুল বেচা-বিক্রি মনে হয় খুব বেশিদিন চলবে না। কিন্তু এরপর অনেকদিন ধরেই তার বইগুলি বিক্রির শীর্ষে রয়েছে। যে উপন্যাস কয়েক বছরের পুরনো, সেগুলি আবারো বেস্ট সেলারের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।

অ্যাট্রিয়া প্রকাশনীতে হুভারের এডিটর মেলানি ইগলেসিয়াস পেরেজ বলেন “আমরা ভাবছিলাম ‘এসব (বইয়ের বিক্রি) কোত্থেকে আসছে?’ আর তখনই (কারণ খুঁজতে গিয়ে) আমরা টিকটক ভিডিওগুলি দেখলাম।”

তিনি বলেন, সেলস বা মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে থাকা কেউ যেভাবে কৌশল সাজাত, তার চেয়ে অনেক ভাল প্রচারণা হয়েছে এভাবে।

হুভার বা তার বিজনেস ম্যানেজার কোহেন, কেউই বিক্রি হওয়া বই থেকে আসা অর্থের সঠিক পরিমাণ জানাতে পারেননি। তাছাড়া বই বিক্রির ফলে আয় হওয়া মোট টাকার হিসাব করাটাও কঠিন। আবার লেখকের নিজের উদ্যোগে প্রকাশ হওয়া বইয়ের রয়্যালটির পরিমাণ আলাদা হয়।

হুভারের কিছু বই আবার একাধিক প্রকাশকের কাছেও দেয়া আছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, তার বই থেকে ভাল পরিমাণ অর্থ এসেছে। বর্তমানে ওয়ালমার্ট, স্যাম’স ক্লাব এবং কস্টকো’র মত চেইন স্টোর কোম্পানির দোকানে দোকানে হুভারের বই থাকে। হুভারের বইয়ের সব প্রকাশ মিলে ২০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি করেছে।

হুভার বলেন, “আগে বইয়ের দোকানে গিয়ে আমার একটা পেপারব্যাক দেখলেই উত্তেজনা কাজ করত। এখন আমি বার্নস অ্যান্ড নোবেলে যাই এবং তারা একটা কোলিন হুভারের টেবিল রেখেছে, ইটস ইনসেন।”

“আমরা লোক দেখানো মানুষ না”

হুভারের জীবনে এক ধরনের ধাক্কার মত করেই খ্যাতি এসেছে। কারণ ব্যক্তিগতভাবে হুভার ইন্ট্রোভার্ট একজন মানুষ। যিনি আলোচনায় থাকতে অনেক অপছন্দ করেন। এই আর্টিকেল রচনার সময়ও তিনি বলেছিলেন, “আমি এ ব্যাপারে নার্ভাস হয়ে আছি। আর ভাল সাক্ষাৎকারও আমি দিতে পারি না।”

তিনি এখনো ওয়ালমার্ট-এ গিয়ে পায়জামা পরে কেনাকাটা করেন। এখনো আগের সেই ১০০ একর জায়গাতেই থাকেন, যেখানে তার পরিবারের খামার ছিল। তার আঙ্কেল সেই খামারে গবাদি পশুর জন্য ঘাস কাটেন, খড়ের যোগান দেন।

২০১৫ সালের বই বিক্রির টাকা দিয়ে হুভার তাদের পুরনো বাড়ি ভেঙে একটা নতুন খামারবাড়ি তৈরি করেছেন। একতলার এই বিরাট বাড়িই এখন হুভারদের থাকার জায়গা। হুভার তার নিজের জীবনেও কিছু বিলাসিতার আয়োজন করেছেন। যেমন তার থাকার ঘরে রত্ন পাথর ও স্ফটিক প্রদর্শনের জন্য ডিসপ্লে-স্পেস রেখেছেন। তার হোম অফিসে থাকা বইয়ের তাকের পেছন দিয়ে একটি গোপন রাস্তা রেখেছেন, যেখান দিয়ে আরেকটি অফিসে যাওয়া যায়। এই গোপন অফিসে গিয়ে মাঝে মধ্যে তিনি নির্জনে লেখালেখি করেন।

কলিন হুভার
কলিন ও তার মা ভানয় জেন্তেলেস ফিতে (Vannoy Gentles Fite)। ২০২১ সালে ছবিটি পোস্ট করেন কলিন। ফিতে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভেষজ চাষ করে যাচ্ছেন। তিনি একজন সার্টিফায়েড অ্যারোমাথেরাপিস্ট ও আয়ুর্বেদ ঔষধের ছাত্র। ২০১৬ সালে দুজন সহ-লেখকের সাথে ‘Essential Oils for Healing: Over 400 All-Natural Recipes for Everyday Ailments’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছেন তিনি।

হুভারের মা তার সাথেই থাকেন। মা-মেয়েতে সম্পর্কও খুব ভাল। হুভার ও তার মা, দুজনের হাতের কব্জিতেই হার্ট আকৃতির ম্যাচিং উল্কি আঁকা আছে।

ইট এন্ডস উইথ আস বইয়ে ‘লেখকের কথা’ অংশে হুভার তার মায়ের প্রশংসা করে অনেক কিছু লিখেছেন। বইটি মূলত পারিবারিক নির্যাতনের কাহিনী নিয়ে লেখা। হুভার তার ছোট শহরের প্রায় সবাইকেই চেনেন। হাইস্কুলের সহপাঠীদের সাথে তার সম্পর্ক এখনো ভাল। হুভার বলেন, “আমরা লোক দেখানো মানুষ না।”

বিখ্যাত হওয়ার কিছু মন্দ আর অস্বস্তিকর দিক আছে। গত বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে হুভার এর কিছু ভক্ত তার ড্রাইভওয়েতে এসে টিকটক-এ একটি ভিডিও পোস্ট করে। এ ঘটনার পর হুভার তার বাড়ির সদরে একটা ধাতব দরজা লাগিয়েছেন। তার হাতের কব্জিতে আঁকা হার্ট আকৃতির উল্কির মত করেই তৈরি করা হয়েছে এই দরজা। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লেখা শেষ করার চাপ ও ব্যবসা সামলানোর ধকলও তার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ইট স্টার্স্টস উইথ আস বইয়ের জন্য একটা বুক ট্যুর দেয়ার কথা ছিল তার, কিন্তু মানসিক চাপ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে এই ট্যুর বাদ দিতে হয়েছে তাকে।

হুভার প্রথমে ছোট পরিসরে লিখতেন। তখন মোটামুটি স্বাধীন এক লেখক থাকলেও, তার প্রচুর ভক্ত পাঠক ছিল। আর এখন তো তিনি মূলধারার পপ-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন। তবে আলোচনায় আসার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে কিছু সমালোচক তাকে ‘ওভাররেটেড’ বলেও নিন্দা করেন। হুভার নিজে এসব বিষয়ে জানেন। তিনি নিজেও তাকে নিয়ে বানানো টিকটক দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে উঠেছেন।

হুভার বলেন, “আমার ফিড এর পুরোটাই ‘কলিন হুভার’ দিয়ে ভরে থাকে। কিন্তু জানেন, আমি বিড়াল নিয়ে বানানো ভিডিও দেখতে চাই।”

হুভার প্রায়ই ঔপন্যাসিক ই এল জেমস এর কাছে পরামর্শ নেন। ই এল জেমস বিখ্যাত হয়েছেন যৌন আবেদনময়ী ব্লকবাস্টার উপন্যাস ‘ফিফটি শেডস অফ গ্রে’ লিখে। হুভার তার কাছে জানতে চেয়েছেন, হঠাৎ সফলতার মধ্য দিয়ে কীভাবে সামনে আগানো যায়।

গত বছর, অর্থাৎ ২০২২ এর গ্রীষ্মে ‘রোমান্স কনভেনশন’ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে তারা দুজন ডালাসে একটা সকাল একসাথে কাটিয়েছেন। এর আগে তারা দুজন একসাথে ব্লোআউট (চুল সাজানোর কৌশল) করেছেন, ‘টার্গেট’ নামের সুপারমার্কেট চেইনে গিয়ে একসঙ্গে কেনাকাটা করেছেন, জনসমাগম এড়িয়ে কিছু বই স্বাক্ষর করেছেন এবং ক্র‍্যাকার ব্যারেল রেস্টুরেন্টে বসে একসাথে চিকেন ফ্রাইড স্টেক খেয়েছেন।

হুভার বলেন, “আমার সঙ্গে কখন কী ঘটছে, তা আমি সবসময়ই ওনাকে ফোন করে জানাই। এটা (অভিজ্ঞতা শেয়ার করাটা) অদ্ভুত আর খুব বেশি লোক (হঠাৎ জনপ্রিয় হওয়া) এর মধ্য দিয়ে গেছে, এমনটাও না।”

সময়ের সাথে সাথে ভক্ত পাঠক বেড়ে যাওয়ার পর হুভার তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেও হিমশিম খেয়েছেন। ‘রোমান্স কনভেনশন’ অনুষ্ঠানে ভক্তদের সাথে সাক্ষাতের পর কিছু স্বেচ্ছাসেবক ও বন্ধুদের কাছ থেকে অভিযোগ শুনতে হয়েছে তার। তাদের দিকে মনোযোগ না দেয়াতে অপমানিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন তারা। বাড়িতে ফেরার সময় এসব ঘটনার কথা ভেবে কেঁদে ফেলেছিলেন হুভার। তখন এ নিয়ে কথা বলতে তার মা’কে কল দেন তিনি।

কলিন হুভার
হুভার বলেন, “আগে বইয়ের দোকানে গিয়ে আমার একটা পেপারব্যাক দেখলেই উত্তেজনা কাজ করত। এখন আমি বার্নস অ্যান্ড নোবেলে যাই এবং তারা একটা কোলিন হুভারের টেবিল রেখেছে, ইটস ইনসেন।”

সেই স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে হুভার বলেন, “(মা) বলছিল, ‘তুমি জানো কলিন, কিছু পেতে হলে কিছু দিতেই হয়।’ আর আমি উত্তরে বলেছিলাম, ‘ঠিকই বলছো। আসলে আমার ক্যারিয়ারে যা কিছু হয়েছে, সেসব নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। কিন্তু এগুলি আবার কিছুটা ভয় ধরিয়ে দেয়ার মতোও।”

হুভার কোনোদিনই ভাবেননি তিনি একজন বেস্ট সেলিং লেখক হবেন। একইভাবে তিনি বেস্ট সেলিং লেখক হয়েই থাকবেন, এমনটাও আশা করেন না।

হুভার বলেন, “এখনো আমার মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে, ‘এ সবকিছুই আগামীকাল শেষ হয়ে যাবে।’ কাজেই এটা (খ্যাতি) আমার উপভোগ করতে হবে।”

লিংক: কলিনহুভার ডটকম